রায়হান আলীঃ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় চলনবিলের একাংশ লাহিড়ী মোহনপুর, বড়পাঙ্গাসী,উধুনিয়া এই তিন ইউনিয়নে প্রতিবছর ক্ষিরার আবাদ বেশি হয়ে থাকে। এ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ১৮০ হেক্টর নির্ধারন করেছিল উপজেলা কৃষি অফিস। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ২০০ হেক্টর জমিতে ক্ষিরার আবাদ হয়েছে।
এবছর চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন বেশি হয়েও আবাদি খচর তুলতে হিমসিম খাচ্ছে কৃষক। গতবছরের তুলনায় এবছর খিড়ার মূল্য একেবারেই কম। গত মৌসুমে ক্ষিরা বিক্রি হয়েছে মন প্রতি ৬৪০-৭২০ টাকা দরে। কিন্তু এবছর ক্ষিরার বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৪০-৩২০ টাকা দরে। এতে হতাশায় কৃষক, গতবছর ক্ষিরার বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় এ মৌসুমে নতুন করে অনেক কৃষক ক্ষিরার চাষ করেছে।
উল্লাপাড়া উপজেলার বলতৈল গ্রামের ক্ষিরা চাষী নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এ বছর তিনি তিন বিঘা জমিতে শাহজাদী, আলফা, আলব্রিড জাতের হাইব্রিড ক্ষিরা চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকার মত। গেল বছর তিনি ১৬ থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে ক্ষিরা বিক্রি করেছেন। কিন্তু এ বছর তাকে বিক্রি করতে হচ্ছে ৭ থেকে ৮ টাকা কেজি দরে। ক্ষিরা মৌসুমের প্রায় ১ মাসে তিনি মাত্র ৪ হাজার টাকার ক্ষিরা বিক্রি করেছেন। দাম না থাকায় মাঠেই নষ্ট হচ্ছে তার বিপুল পরিমান ক্ষিরা। মৌসুমে ক্ষিরার দাম উঠবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে তার।
একই কথা বললেন, উপজেলার চাকসা গ্রামের আমজাদ মিয়া। তিনি চাষ করেছেন আড়াই বিঘা জমিতে। বাম্পার ফলন হয়েছে তার। কিন্তু বাজারে ক্ষিরার দাম না থাকায় চরম ক্ষতির আশঙ্কায় ভুগছেন তিনি। এর আগের বছরগুলোতে মাঠে এসেই ব্যবসায়ীরা ক্ষিরা নিয়ে যেতেন। এ বার দেখা নেই মাঠে আসা ব্যবসায়ীদের। ফলে চরম লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। নজরুল ইসলাম ও আমজাদ মিয়ার মতো অবস্থা এ অঞ্চলের অনেক ক্ষিরা চাষীর।
আজ শনিবার উপজেলার চরবর্দ্ধনগাছায় বড় ক্ষিরা আঁড়তে গিয়ে কথা হয় ব্যবসায়ী মজনু মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিদিন এই আড়ৎ থেকে ক্ষিরা মৌসুমে তিনি ৭ থেকে ৮ ট্রাক ক্ষিরা ঢাকার মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, কাওরান বাজারসহ কয়েকটি কেন্দ্রে সরবরাহ করে থাকেন। এবছর বাইরের ক্রেতাদের চাহিদা কম থাকায় মাত্র ২ থেকে ৩ ট্রাক ক্ষিরা তিনি পাঠাচ্ছেন। দাম কম হওয়ায় ব্যবসায় লাভও কম হচ্ছে তার।
মজনু মিয়া আরো জানান, এ বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর ক্ষিরা চাষ ও ভাল ফলন হওয়ায় বাইরের এলাকা থেকে উল্লাপাড়া এলাকার উৎপাদিত ক্ষিরার টান কমে গেছে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এখানকার চাষীরা।
উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ আজমল হক জানান, এ বছর উল্লাপাড়া উপজেলায় ক্ষিরা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮০ হেক্টর। কিন্তু গেল বছর চাষীরা ক্ষিরার দাম ভাল পাওয়ায় এ বছর এখানে চাষ হয়েছে ২’শ হেক্টরের উপরে। তাছাড়া অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ভাল উৎপাদন হয়েছে। আর এতে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম কমে গেছে।